isshti

সপ্তাহখানেক হয়ে গেল কোপা ডেল রে-এর ফাইনালের। টিভির সামনে বসে ছিলাম রাত সাড়ে বারটা পর্যন্ত; সুপার স্পোর্টস আসবে সেই আশায়। কিন্তু যখন দেখলাম সুপার স্পোর্টস আসার আর কোন সম্ভবনা নেই তখন এসে পিসি অন করলাম। Google এর বদৌলতে পেয়ে গেলাম লাইভ ফুটবল খেলা দেখার ওয়েব সাইট। কিন্তু আমার যা নেট স্পীড (২৫৬ kbps) তাতে খেলা দেখা একটু কঠিনই। তবুও অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা মোটামুটি খেলা দেখা যাবে এমন ওয়েব সাইট খুঁজে পেলাম। কিন্তু ভিডিও কোয়ালিটি তেমন ভাল না আর কিছুক্ষণ পরপর বাফারিং এর জ্বালায় কিছুটা বিরক্ত হলেও বার্সা-রিয়াল এর আরেকটি এল ক্লাসিকো দেখতে পাওয়ার আনন্দে এই সামান্য জ্বালা সহ্য করলাম। কিন্তু মাঠে সেদিন বড়ই অপরিচিত লাগছিল বার্সেলোনাকে। রিয়ালের স্পেশাল ওয়ান মরিনহো যে বার্সার আসল অস্ত্র পাসিং ফুটবল এবং বল নিজেদের দখলে রাখার ক্ষমতাকে প্রায় নিস্ক্রিয় করে ফেলেছিল পুয়োল বিহীন বার্সার রক্ষণভাগ যেন বেশ অরক্ষিত। অন্যদিকে রিয়ালের ডিফেন্সের কাছে বার্সার আক্রমণভাগকে অসহায় মনে হচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। খেলার ১০৩ মিনিটে গোলমুখে ডি মারিয়ার ক্রস হেড করে বার্সার জালে ঢুকিয়ে খেলার একমাত্র গোলটি করে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। খেলার বাকি সময় আর বার্সা তেমন সুবিধা করতে পারে নাই। তাই রিয়াল মাদ্রিদ ১৮ বছর পরে স্বাদ পেলো কোপা ডেল রে ট্রফির। তবে বার্সাও জিতেছে তাদের সমর্থকদের জন্য। সমর্থকেরা শান্ত থেকেছিল, কোন রকম বিশৃঙ্খলা করেনি। বার্সার খেলোয়াড়রাও করেনি তেমন কোন উদ্ধতপূর্ণ আচরণ যা গত ২৯ নভেম্বর রিয়ালের খেলোয়াড়েরা করেছিল।
এবার আসি UEFA Champions League এর বার্সা-রিয়াল মুখোমুখি হওয়ার বিষয় নিয়ে। এর রেকর্ডে অবশ্য বার্সাকে অনেক পিছনে ফেলেছে রিয়াল। UEFA Champions League এ এর আগে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে বার্সা-রিয়াল। যার মধ্যে একটিমাত্র জয় পেয়েছে বার্সা সেটাও কিনা ১৯৬০-৬১ মৌসুমে। রিয়াল জিতেছে তিনটিতে আর বাকি দুটো ড্র। সর্বশেষ ২০০১-০২ মৌসুমের সেমি ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। সেবার প্রথম লেগে নিজেদের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে ২-০ গোলের হারের পর দ্বিতীয় লেগে বার্নাবুতে ১-১ গোলের ড্রয়ে বার্সার আর UEFA Champions League এর ফাইনাল খেলা হয় নি। আর সেই ২০০১-০২ মৌসুমে UEFA Champions League এর ট্রফি নিজেদের ঘরে তোলে রিয়াল মাদ্রিদ। একটা মজার ঘটনা হল সেবারও অন্য সেমিতে উঠেছিল ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর জার্মানির বায়ার লেভারকুসেন। এবার অবশ্য বায়ার লেভারকুসেন নয় জার্মানির আরেকটি ক্লাব শালকে উঠেছে সেমি ফাইনালে। গতকাল রাতের খেলায় ২০০১-০২ মৌসুমে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২-০ গোলের ব্যবধানে শালকেকে ওদের মাঠে হারিয়ে ফাইনালের পথে এক পা বাড়িয়ে রাখল। আশা করি বার্সেলোনাও রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের মাটিতে হারিয়ে “কোপা ডেল রে”-এর ফাইনালের হারের প্রতিশোধ নেবে আর এক ধাপ এগিয়ে যাবে UEFA Champions League এর শিরোপা নিজেদের করে নেয়ার পথে।
isshti

আবার ফিরে এলো এল ক্লাসিকো। গত এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনা ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে রিয়াল মাদ্রিদকে। গত বছরের ২৯ নভেম্বর সেই খেলা দেখেছিলাম ঢাকায় মামার বাসায়। সেই খেলার আগে রিয়াল মাদ্রিদ এই ২০১০-১১ সেশনে অপরাজিত ছিল। তার উপর রোনালদোর ফর্ম এবং হোসে মরিনহো এর কোচিং রিয়াল মাদ্রিদকে করেছিল অপ্রতিরদ্ধ। কিন্তু বার্সেলোনার অসাধারণ পাসিং ফুটবল আর রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মেজাজ হারানোর জন্য সেই ম্যাচে আসে বার্সেলোনার ৫-০ গোলের ব্যবধানের বিশাল জয়। এই ম্যাচের স্কোর লাইন কিন্তু এই চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যকার প্রকৃত ব্যবধান প্রকাশে ব্যর্থ।
আগামী ১৮ দিনে বার্সা - রিয়াল চারবার মুখমুখি হবে। আজ (১৬/০৪/২০১১) লা লিগায় খেলা। ২০ তারিখ স্প্যানিশ কিংস কাপের ফাইনাল। আর ২৭ এপ্রিল ও ৩ মে UEFA চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে মুখমুখি হবে শৈল্পিক ফুটবল খেলা বার্সেলোনা আর অনেকটা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর মত পাওয়ার ফুটবল খেলা রিয়াল মাদ্রিদ।
অনেক আশা প্রত্যাশা নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসলাম একটু আগেই। একটু আগে না অনেক আগেই বলা চলে। কারন টেন অ্যাকশনে গত এল ক্লাসিকোর হাইলাইটস দেখাচ্ছিল। তাই দেখলাম। ফুটবল খেলায় এমন হাইলাইটস আগে কখনো দেখছি বলে মনে হয় না। খেলার সাথে সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। ভালই লাগল। তো ঠিক বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায় খেলা শুরু হল। বার্সেলোনা শুরু করল তাদের শিল্পের প্রদর্শনী। শুরু থেকেই চমৎকার পাসিং ফুটবল। কিন্তু গোলের খেলা ফুটবলে কিন্তু গোলটাই মুখ্য। বার্সেলোনা চমৎকার ফুটবল খেললেও গোলের তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। রিয়াল মাদ্রিদ বল দখলে বার্সেলোনার থেকে পিছিয়ে থাকলেও বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ পেল। কিন্তু কখনোবা ভাগ্য সাথে ছিল না, আবার কখনো বার্সেলোনার ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় গোলের দেখা পায় নি রিয়াল মাদ্রিদ। আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি কিন্তু কয়েকটি সুযোগ সৃষ্টি করেছিল যা ইকার ক্যাসিয়াসের দুর্দান্ত গোলকিপিং এর জন্য গোল হয় নি। ডেভিড ভিয়াকে  ডিবক্সের মধ্যে ইকার ক্যাসিয়াস ফাউল করলেও রেফারি পেনাল্টি দেয় নি।  গোলশূন্য  প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও দু দলের প্রায় একই রকম খেলা। ৫৩ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা এবং  সুযোগ পেয়ে এই প্রথম "স্পেশাল ওয়ান" হোসে মরিনহোর দলের বিপক্ষে প্রথম গোল করে মেসি। বেশ নিশ্চিন্ত হয়েই খেলা দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল যে পেপ গারদিওলার দল এল ক্লাসিকোতে টানা ষষ্ট জয় পেতে যাচ্ছে। কিন্তু ৮২ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ পেনাল্টি পায় এবং রোনালদো গোল করে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনে। যে ধ্রুপদী লড়াইয়ের আশায় রাত জেগে খেলা দেখলাম তা আর পূরণ হল না। পুরো খেলায় দুই দলের ফনিশিং এর অভাব এবং রিয়ালের গায়ের জোরে খেলার প্রবণতার জন্যই মনে হয় এই এল ক্লাসিকোটা তেমন জমল না। তবে আমি আশাবাদী আগামী বুধবার রাতে পরবর্তী খেলায় দলই তাদের সেরা খেলাটা খেলে সারা বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের আশা পূরণ করবে।